সমুদ্রে এক যাযাবর জাতি যারা কিনা হাঁটতে শেখার আগেই সাঁতার কাটা শেখে !!
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এমন একটি জাতি বাস করে যারা কিনা বাস্তব অর্থে সমুদ্র শাসন করে ! বড় বড় সামুদ্রিক ঝড়, তুফান এবং সুনামি তাদের কিছুই করতে পারে না, বাস্তব অর্থের তারাই সমুদ্রের রাজা !!
এরা হচ্ছে বাজাউ উপজাতি।
সমুদ্রের প্রায় ৭০ মিটার (২৩১ ফুট) গভীরে ডুব দিয়ে নিজ হাতে মাছ ধরে এই উপজাতির লোকেরা ! এরা প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে পারে যেখানে কিনা আধুনিক বিজ্ঞান বলে ৫-৬ মিনিটের বেশি অক্সিজেনের অভাবে বা শ্বাস বন্ধ থাকলে মস্তিষ্ক পুরোপুরি অকার্যকর (Brain Death) হয়ে যেতে পারে। এদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য হোমো স্যাপিয়েন্স থেকে কিন্তু অনেকটাই আলাদা যেমন এদের প্লীহা (spleen) আমাদের থেকে অনেকটাই বড় যার কারণে এরা অধিক সময় শ্বাস আটকে রাখতে পারে !!
এরা বছরের বেশিরভাগ সময় সমুদ্রে ভাসমান নৌকায় বসবাস করে। অনেক বাজাউ জীবনে কখনো স্থলভাগে বা মাটিতেই বাস করেনি !!
বাজাউদের করুণ ইতিহাস
এই যাযাবর জাতির সামুদ্রিক জীবন যাপনের নেপথ্যে রয়েছে একটি রূঢ় বাস্তবতা।
প্রায় হাজার বছর আগের কথা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোহর রাজ্যের রাজকন্যা দায়াং আয়েশাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সুলু রাজ্যের রাজার সঙ্গে বিয়ে দিতে। তাই জোহরের রাজার বিশাল রাজকীয় নৌবহর চলেছে সমুদ্র পথে। কয়েকশো নৌকার বহর।
রাজকন্যাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাজাউ নামের এক উপজাতি। যারা এই এলাকার সমুদ্রকে নিজের হাতের তালুর মতই চেনে।
ব্রুনেইয়ের তৎকালীন সুলতান আগেই আয়েশাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জোহরের রাজা তার মেয়ের সঙ্গে ব্রুনেইয়ের সুলতানকে বিয়ে দিতে রাজি নন।
এই অপমান ভুলতে পারেননি ব্রুনেইয়ের সুলতান। সুলুর রাজার সঙ্গে আয়েশার বিয়ে তিনি মেনে নিতেও পারেননি। তাই অন্য কৌশল নিলেন সুলতান। আরও বড় নৌবহর নিয়ে এসে জোহর রাজ্যের নৌবহরকে অতর্কিতে আক্রমণ করলেন। গভীর সমুদ্রে তুমুল লড়াইয়ের পর ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন জোহরের রাজকন্যাকে।
দেশে ফিরেই রাজকন্যাকে বিয়ে করলেন সুলতান। আর বিপদে পড়লেন কয়েকশ' বাজাউ ও তাদের পরিবার। দেশে ফিরলে জোহরের রাজা হত্যা করবেন। প্রাণের ভয়ে তারা আর দেশে ফিরতে পারেনি। স্থলের সঙ্গে তাদের চিরকালের জন্য বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সমুদ্রই হয়ে যায় তাদের ঘর। ঘুরতে থাকে বাজাউরা বিভিন্ন উপসাগরে, দেশহীন যাযাবর হয়ে।
Comments
Post a Comment