Skip to main content

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সফলতার রহস্য



বর্তমান পৃথিবীর আলোচিত, শক্তিধর রাজনৈতিক ব্যক্তি শি জিনপিং এর জীবনে তার বাবার প্রভাব খুব বেশি। তার বাবাই ছিলেন তার জীবনের সেরা শিক্ষক। তার জীবনের সফলতার একমাত্র রহস্য তার বাবার দর্শন। কী সেই দর্শন?  আসুন জেনে নিই তার জবানিতে। 


শি জিনপিন এর আত্মকথা:


"আমার বাবার দেওয়া তিনটে উপদেশ আমাকে আজ এখানে পৌঁছে দিয়েছে।


ছোটবেলায় আমি খুব স্বার্থপর ছিলাম। সবকিছুতেই নিজের সুবিধে আর লাভটা বুঝে নেবার চেষ্টা করতাম। আমার এই দোষের জন্য আস্তে আস্তে আমার বন্ধুর সংখ্যা কমতে শুরু করল। শেষে অবস্থা এমন হোলো যে আমার আর কোনো বন্ধুই অবশিষ্ট রইল না। কিন্তু, সেই অপরিনত বয়েসে আমি এর জন্য নিজেকে দায়ী না করে সিদ্ধান্ত নিলাম আমার বন্ধুরা আসলে হিংসুটে। ওরা আমার ভাল দেখতে পারে না। আমার বাবা সবই লক্ষ করতেন, মুখে কিছু না বললেও।


একদিন রাতে বাড়ি ফিরে দেখি, বাবা আমার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছেন। টেবিলে রাখা আছে রান্না করা ন্যুডলের দুটি ডিশ। একটা ডিশে সেদ্ধ ন্যুডলের ওপর রাখা একটি খোসা ছাড়ানো সেদ্ধ ডিম। অন্য ডিশটিতে শুধু  ন্যুডলসের যে কোনো একটি ডিশ বেছে নিতে বললেন বাবা। 


স্বাভাবিক ভাবেই আমি ডিম সমেত ডিশটাই উঠিয়ে নিলাম। সেই সব দিনে চীনে ডিম ছিল এক দুস্প্রাপ্য জিনিস। উৎসবের দিন ছাড়া কারো বাড়িতে ডিম খাবার কথা তখন ভাবা যেত না। খাওয়া শুরু করবার পর দেখা গেল বাবার ডিশে ন্যুডলসের তলায় আসলে লুকিয়ে রাখা আছে দুটো ডিম। আমার এত দুঃখ লাগছিল তখন। কেন যে তাড়াহুড়ো করে বাছতে গেলাম। 


বাবা আমাকে দেখছিলেন। খাবার পর মৃদু হেসে বললেন, "মনে রেখো, তোমার চোখ যা দেখে, সেটা সব সময় সত্যি নাও হতে পারে। শুধু চোখে দেখে যদি মানুষ বা কোনো পরিস্থিতিকে বিচার করে সিদ্ধান্ত নাও, ঠকে যাবার সম্ভবনা থাকবে।"


পর দিন আমার বাবা আবার খাবার টেবিলে ন্যুডলস ভর্তি দুটো ডিশ রেখে আমাকে খেতে ডাকলেন। আগের দিনের মত এবারেও একটাতে ডিম আছে, আর একটাতে নেই। আমাকে যে কোনো একটি ডিশ বেছে নিতে বলা হোলো। আমি আগের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি, চোখ যা দেখে তা সত্যি নাও হতে পারে। আমি ডিম ছাড়া ডিশটিই বেছে নিলাম। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখলাম, ভেতরে কোনো ডিমই নেই।


বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাসলেন। 

"অভিজ্ঞতা সব সময় সঠিক পথ দেখায় না। জীবন বড় বিচিত্র। জীবনে চলার পথে বহুবার আমাদের মরীচিকার সামনে পরতে হয়। এর থেকে উত্তরন অসম্ভব। জীবন যেটা তোমাকে দিয়েছে, সেটা মেনে নিলে কষ্ট কম পাবে। তোমার অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধিমত্তা তুমি অবশ্যই কাজে লাগাবে, কিন্তু শেষ কথা জীবনই বলবে।" 


তৃতীয় দিনে আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আগের দিনের মতই এবারেও একটাতে ডিম আছে, আর একটাতে নেই। 


তবে একটা ব্যাপার এবার একটু অন্য রকম হলো।


এবার আমি বাবাকে বললাম, আগে তুমি নাও। তার পর আমি। কারন তুমি বাড়ির সবার বড়, এই সংসার তোমার রোজগারে চলে। তোমার অধিকার সবার আগে। 


কথাগুলো শুনে বাবার মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠল, মুখে কিছু বললেন না যদিও।


খাওয়া শুরু করবার পর আমি দেখলাম ন্যুডলসে র নীচে আমার ডিশে দুটো ডিম। খাবার পর বাবা আমাকে কাছে ডাকলেন। সস্নেহে আমার হাত ধরে বললেন, "মনে রেখো, কৃতজ্ঞতা এবং ঋণ স্বীকার করা মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তুমি জীবনে যদি অন্যের জন্য ভাব, অন্যকে দাও, জীবনও তোমার কথা ভাববে, তোমাকে আরো বহুগুণে ফিরিয়ে দেবে।


বাবার এই তিনটে উপদেশ আমি আজীবন মনে রেখেছি, এবং মেনে চলেছি।


কি আশ্চর্য , সত্যি জীবন আমাকে বহু গুণ ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি আজ যেখানে আছি, সেটা জীবনের দান ছাড়া আর কি?"

Comments

Popular posts from this blog

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (Mariana Trench) পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম মহাসাগরীয় খাদ, যা প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের কাছে অবস্থিত। এটি প্রায় ১১,০৩৪ মিটার (৩৬,২০১ ফুট) গভীর, যা মাউন্ট এভারেস্টকে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করলেও উপরে প্রায় ২ কিলোমিটার জায়গা থেকে যেত। অবস্থান: প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। গভীরতম স্থান: 'চ্যালেঞ্জার ডিপ' (Challenger Deep) হল মারিয়ানা ট্রেঞ্চের সবচেয়ে গভীর স্থান। উৎপত্তি: এটি দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে গঠিত, যেখানে প্রশান্ত প্লেট ফিলিপাইন প্লেটের নিচে সরে গেছে। চাপ: এখানে পানির চাপ ভূমির বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তুলনায় প্রায় ১,০০০ গুণ বেশি । জীববৈচিত্র্য: এই গভীর খাদে অন্ধকারে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রজাতির অদ্ভুত সামুদ্রিক প্রাণী পাওয়া যায়, যেমন অ্যাম্পিফডস, অ্যাঙ্গলার ফিশ, এবং দৈত্যাকার অ্যামিবা। গবেষণা ও অভিযান: ১৯৬০ সালে প্রথমবারের মতো জ্যাক পিকার্ড ও ডন ওয়ালশ নামক গবেষকরা 'ট্রায়েস্ট' নামক ডুবোযানে করে চ্যালেঞ্জার ডিপে পৌঁছান। ২০১২ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন একক অভিযানে গভীরতম স্থানে পৌঁছে ভিডিও ধ...

বাজাউ: দ্যা সী জিপসি

সমুদ্রে এক যাযাবর জাতি যারা কিনা হাঁটতে শেখার আগেই সাঁতার কাটা শেখে !!  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এমন একটি জাতি বাস করে যারা কিনা বাস্তব অর্থে সমুদ্র শাসন করে ! বড় বড় সামুদ্রিক ঝড়, তুফান এবং সুনামি তাদের কিছুই করতে পারে না, বাস্তব অর্থের তারাই সমুদ্রের রাজা !!  এরা হচ্ছে বাজাউ উপজাতি। সমুদ্রের প্রায় ৭০ মিটার (২৩১ ফুট) গভীরে ডুব দিয়ে নিজ হাতে মাছ ধরে এই উপজাতির লোকেরা ! এরা প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে পারে যেখানে কিনা আধুনিক বিজ্ঞান বলে ৫-৬ মিনিটের বেশি অক্সিজেনের অভাবে  বা শ্বাস বন্ধ থাকলে মস্তিষ্ক পুরোপুরি অকার্যকর (Brain Death) হয়ে যেতে পারে। এদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য হোমো স্যাপিয়েন্স থেকে কিন্তু অনেকটাই আলাদা যেমন এদের প্লীহা (spleen) আমাদের থেকে অনেকটাই বড় যার কারণে এরা অধিক সময় শ্বাস আটকে রাখতে পারে !!  এরা বছরের বেশিরভাগ সময় সমুদ্রে ভাসমান নৌকায় বসবাস করে। অনেক বাজাউ জীবনে কখনো স্থলভাগে বা মাটিতেই বাস করেনি !! বাজাউদের করুণ ইতিহাস এই যাযাবর জাতির সামুদ্রিক জীবন যাপনের নেপথ্যে রয়েছে একটি রূঢ় বাস্তবতা। প্রায় হাজার বছর আগের কথা। দক্ষিণ-পূর্ব...